ঈসা ইবনে মারিয়াম (আরবি: عيسى, প্রতিবর্ণী।যিনি খ্রিস্টধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ বাইবেলের নূতন নিয়মে যিশু নামে পরিচিত, ইসলাম ধর্মে একজন অদ্বিতীয় ও গুরুত্বপূর্ণ নবী ও রাসূল (আল্লাহ বা একেশ্বরের বার্তাবাহক ও প্রচারক) হিসেবে স্বীকৃত।ইসলামের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কুরআনে ঈসা ও তার মা মরিয়ম (মেরি) সম্পর্কে অনেক বর্ণনা দেওয়া আছে। ইসলামে ঈসাকে “মসিহ” উপাধি দেওয়া হয়েছে, যার অর্থ “ত্রাণকর্তা”। কুরআন ও হাদিসে “সময়ের সমাপ্তি” সংক্রান্ত বিভিন্ন ঘটনাবলির এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেন ঈসা। আল কুরআনে ঈসার মা মরিয়মকে উপজীব্য করে একটি সম্পূর্ণ অধ্যায় বা সুরা রয়েছে, যার নাম সুরা মরিয়ম।
অর্থানুসারে তাই হওয়া উচিৎ। খ্রিস্ট জন্ম থেকেই তো খ্রিস্টাব্দ। কিন্তু তাহলে তো যিশুর জন্ম পয়লা জানয়ারি হওয়া উচিৎ। মাঝখানের ছ’ছটা দিন কোথায় গায়েব হয়ে গেলো!
এবার বারোটি মাসের নামকরণ বিষয়ে আলোচনা করব
সেপ্টেম্বর কথাটি এসেছে সংস্কৃত ‘সপ্তম’ বা ল্যাটিন ‘সেপ্টেম’ থেকে। গ্রিক, ল্যাটিন তথা প্রায় সমস্ত ইউরোপিয় ভাষার অনেক শব্দই উচ্চারণে ও অর্থে সংস্কৃতের সঙ্গে মেলে। তেমনি, অক্টোবর এসেছে, অষ্টম বা অক্টা থেকে, নবম বা নভেম থেকে নভেম্বর, দশম বা ডিসেম থেকে ডিসেম্বর।
জুলিয়াস সিজার তার জন্মমাস কুইন্টিলিস এর নাম পরবর্তন করে জুলাই করেন। শুধু তাই নয়, ফেব্রয়ারি মাস থেকে এক দিন কেটে জুলাই মাসে এক দিন যোগ করে দেন।
সেপ্টেম্বর তো সপ্তম মাস নয়, নবম মাস, তেমনি অক্টোবর, নভেম্বর, ডিসেম্বরও যথাক্রমে দশম, একাদশ আর দ্বাদশ।
বিদ্যা বুদ্ধিতে, শক্তিতে, সে সময় রোম সাম্রাজ্যের খুব নামডাক ছিল।এই রোমানরা একপ্রকার ক্যালেন্ডার ব্যবহার করত। সম্ভবত রোমান সম্রাট রোমুলাস ৭৩৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে এই ক্যালেন্ডার চালু করেন। এতে থাকত দশটি মাস, যার শুরু মার্চ মাসে আর শেষ ডিসেম্বরে। সেই হিসাবে সাতে সেপ্টেম্বর, আটে অক্টোবর, নয়ে নভেম্বর আর দশে ডিসেম্বর। ছয়ে ছিল সেক্সটিলিস, আর পাঁচে কুইন্টিলিস, যে দুটো মাসকে এখন আমরা অগাস্ট আর জুলাই নামে চিনি।
জুন মাসের নামকরণ হয়েছে রোমান দেবতা জুপিটারের স্ত্রী জুনোর নামে, মে হয়েছে ‘মেইয়া’, এপ্রিল ‘আফ্রেদিৎ’ আর মার্চ যুদ্ধের দেবতা মার্সের নামে।
দশ মাসের বছরে ছিল মোট তিনশ চার দিন।এই ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে চাষবাস, পালাপার্বণ কিছুই ঠিকমতো করা যেত না। তার ওপর, রাজা মহারাজারা ইচ্ছাখুশি ক্যালেন্ডারে দিন-টিন বাড়িয়ে কমিয়ে দিতেন।
পরবর্তী কালে সম্রাট নুমা পূর্বের দশ মাসের সঙ্গে আরও দুটি মাস জানয়ারি আর ফেব্রুয়ারি যোগ করেন। বাইশ দিনের একটি তেরোতম মাসও সে সময় ক্যালেন্ডারে এসেছিল, যেটি এক বছর অন্তর অন্তর ক্যালেন্ডারে জায়গা পেত। মাসটির নাম ছিল মার্সিডানাস।
মিশরিয়রা সে সময় জ্যোতির্বিদ্যায় অনেকখানি পারঙ্গম হয়ে উঠেছিল। আটচল্লিশ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিশর থেকে একটি ক্যালেন্ডার আমদানি করেন ও পরিমার্জন করে রাজ্যে তিনশ সাড়ে পঁয়ষট্টি দিনে সৌরবৎসর এরকম ক্যালেন্ডার চালু করে জানুয়ারি আর ফেব্রুআরি এই দুটি মাসকে বছরের শুরুতে নিয়ে আসেন।
শুরুতে ফেব্রুয়ারি মাস ত্রিশ দিনেরই ছিল। কুইন্টিলিসও ছিল ত্রিশ দিনের মাস। জুলিয়াস সিজার তার জন্মমাস কুইন্টিলিস এর নাম পরবর্তন করে জুলাই করেন। কিন্তু রাজার নামে মাস; অন্য মাসের চেয়ে ছোট হয় কী করে? তাই ফেব্রয়ারি থেকে এক দিন কেটে জুলাই মাসটি একত্রিশ দিনের করেন।
জুলিয়াস সিজারের পরবর্তী রোমান সম্রাট সিজার অগাস্টাস সেক্সটিলিস মাসটির নাম পরিবর্তন করে অগাস্ট করেন এবং এবারও একই ভাবে বেচারা ফেব্রুয়ারির আরেকটি দিন কাটা যায়।
জুলিয়াস সিজারের নামে এই ক্যালেন্ডার ‘জুলিয়ান ক্যালেন্ডার’ নামে পরিচিত হয়। কিন্তু তখন খ্রিস্টই নেই; তাই খ্রিস্টাব্দও নেই।
সময়ের হিসাবে ৫২৫ খ্রিস্টাব্দে, তখন বাইজানটিয়াম শাসকদের অব্দ প্রচলিত ছিল, যারা কিনা বহু খ্রিশ্চান নিধনের সঙ্গে যুক্ত, সে সময় পোপ ডাইনোসিস এক্সিগুয়াস হিসাব নিকাশ করে একেবারে ৫২৫ AD চালু করেন।
২১ শে মার্চ মহাবিষুব, তার চার দিন পর অর্থাৎ ২৫ শে মার্চ খ্রিস্টানদের একটি অতি পবিত্র দিন। ওই দিন গ্যাব্রিয়েল মেরিকে দর্শন দিয়ে যিশুর আগমনের সুসমাচার দিয়েছিল। আর ২১ শে মার্চ থেকে নয় মাস পরে অর্থাৎ ২৫শে ডিসেম্বর দিনটিকে যিশুর জন্মদিন ধরা হয়।
ত্রয়োদশ শতাব্দীতে পোপ গ্রেগরি লক্ষ করলেন, জুলিয়ান ক্যালেন্ডারে মহাবিষুবের তারিখ হচ্ছে ১০ই মার্চ অর্থাৎ জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ১১ দিন পিছিয়ে পড়েছে। তিনিই জ্যোতির্বিদের সঙ্গে পরামর্শ করে ক্যালেন্ডারে ১১ দিন যোগ করেন, লিপ ইয়ারের নিয়ম চালু করেন।
১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে ইংলন্ড আইন করে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার বাতিল করে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। পরে পৃথিবীর প্রায় সমস্ত দেশই এই ক্যালেন্ডার মেনে চলতে শুরু করে।
ইস্টার্ন অর্থোডক্সিয়ানরা গ্রেগরের এই সংস্কার মানেনি। তাই ওরা ২৫শে ডিসেম্বরের সঙ্গে ১১ দিন যোগ করে ৬ই জানুয়ারি বড়দিন পালন করেন। বর্তমানে আর্মেনিয়াতে ও আরও কয়েকটি দেশে ৬ই জানুয়ারি বড়দিন।
রাশিয়া অনেক পরে (১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের পরে) গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। ১৯০৮ সালে লন্ডন অলিম্পিকে রাশিয়ান দল ১১ দিন পরে পৌঁছায়।
অনেক কথাই বাকি থেকে গেল। পরে হবে। ভালো থাকুন। ২০২১শুভ হোক।
তথ্যসুত্রঃ বিভিন্ন গণমাধ্যম